Tuesday, August 15, 2017

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা
তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭
ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ইতিহাস একটি জাতিসত্তা বা জাতিসমষ্টিকে উদ্বুদ্ধ যেমন করতে পারে, অনুপ্রাণিত করতে পারে, তেমনি ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসমষ্টিকে নেতিবাচক শিক্ষাও দিতে পারে। প্রভাবক-প্রতিপত্তিশালী শক্তি ইতিহাসকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে, নিজের মনোমতো করে রচনা করে কোনো জাতি-জাতিসমষ্টিকে পদানত করে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। জাতিসত্তা বা জাতিসত্তাসমূহ এতে নৈতিকভাবে দুর্বল হতেও পারে।
এতে তার লড়াইয়ের শক্তি, প্রতিরোধের শক্তি ক্ষীয়মানও হতে পারে।
তাই একটি সচেতন জাতিসত্তাকে তার ইতিহাসকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে হয়। প্রভাবক প্রতিপত্তিশালী শক্তির 'ইতিহাস ধ্বংসের' সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্তমূলক প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিতে হয়।
এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে উইন্সটন চার্চিলের ইতিহাস সংক্রান্ত একটি উদ্ধৃতি কোটেড করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
তিনি বলেছিলেন- আমার আশা এই যে, অতীতের ঘটনাবলী নিয়ে অনুসন্ধান তথা পাঠের মাধ্যমে আগামী ভবিষ্যতের জন্য কোনো নির্দেশনা আমরা পেতে পারি, অতীতে যে ভুল হয়েছে তা সংশোধন করার জন্য নতুন প্রজন্মকে সামর্থ্য অর্জনে সক্ষম করে তুলতে পারে এবং এর মাধ্যমে আগামীর দুঃসহ ইতিহাস, যা এখনো প্রকাশিত হয়ে ওঠেনি, তাকে পরিচালিত করতে পারে জনগনকে সাহসিকতার শিক্ষা দানের প্রয়োজনীয়তার মাধ্যমে।
এত কথা বলার প্রয়োজন হলো এই কারণে যে, এই আগস্ট মাস হলো পার্বত্য জুম্ম জনগণের অতীত ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরানোর মাস। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে ভাগ করে দিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চলে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতবর্ষ'র লক্ষকোটি জনগণের মাঝে চিরস্থায়ী এক যুগপৎ দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য এবং নিয়তির নির্মম পরিণতিতে বরণ করেছিল।
অন্যান্য অঞ্চলের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের লক্ষ-হাজার জনতাকেও এই ইতিহাস প্রভাবিত করেছিল।
আমরা দেখি, এই ইতিহাস সৃষ্টিকালীন সময়ে যারা সেই সময়ে আমাদের জাতিসত্তাসমষ্টিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের সাধ্যমত অনেককিছু করেছেন। তাঁরা পার্বত্য জনগণের জন্য, জনগণের ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছেন। তবে হয়তো নানা চিন্তাগত সীমাবদ্ধতার কারণে বা নানাধরণের দুর্বলতার কারণে তাঁরা আরো অনেককিছু করতে পারার কথা থাকলেও হয়তো করতে পারেননি! কী করতে পারতেন বা কেন পারেননি তা নিয়ে এখানে আলোচনা করা সম্ভব নয়।
তবে সেই সময়ের ইতিহাস নিয়ে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছে, বা হচ্ছে তা নিয়ে এখানে কিছু আলোচনা করা দরকার।
তবে তা সংক্ষেপেই করতে হচ্ছে সংগত কারণে।

এখানে আমি আজকে মাত্র একটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দেয়ার চেষ্টা করবো। আমার লেখার শিরোনাম হচ্ছে ‘ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা’। বলেছিলাম, ইতিহাসেরমধ্যেঅনেকসময় বিভ্রান্তি আমদানী করা হয়,অথবা অনেকেই নিজেদের শ্রেণিস্বার্থ বা নানা কারণে ইতিহাসরে মধ্যে নানা বিভ্রান্তি উৎপাদন করান!

পার্বত্য চট্টগ্রামকেনিয়ে যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে আমি আজকে ড. মানিক লাল দেওয়ান-এর লেখা কিছুটা্ আত্মজীবনী মূলক বই ‘আমি ও আমার পৃথিবী’ থেকে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ইতিহাস সংক্রান্ত তাঁর নিজস্ব অনুধাবন বা বোঝাপোড়া নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করবো।
তিনি তাঁর বইয়ে ‘পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম’ নামে একটি অধ্যায় যুক্ত করেছেন। উক্ত অংশে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের তৎকালীন সময়ের অন্যতম একজন নেতা কামিনী মোহন দেওয়ানের বয়ানে সংগ্রামী নেতা স্নেহকুমার চাকমাকে ‘একগুঁয়ে ও ভাবাবেগ প্রাপ্ত উন্মাদ’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন। বিষয়টি সাদাচোখে ছোট বা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়বলে মনে হতে পারে। তবে ইতিহাসের নানা বাঁকে আমরা দেখতে পাই, সংগ্রামী ও বিপ্লবী বা জনগণেরসত্যিকার কল্যাণের জন্য কাজ করা অনেক নেতাকে এভাবে চিত্রিত করানোর চেষ্টা করা হয়। এভাবে চিত্রিত করার চেষ্টার অন্যতম কারণ হলো,উক্ত ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা। তবে আমি আমার এই লেখায় এই বিষেয়টি নিয়ে এখানে তেমন কোনো আলোচনাকরবো না। পরে এ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে।
আজকের লেখায় আমি ড. মানিকলাল দেওয়ানের একটি বিষয় পর্যালোচনার দিকে নজর দেবো।

তিনি তার বইয়ে ইতিহাসের আরেকটি বিষয়কে’বিভ্রান্তি’জনকভাবে উপস্থাপন করেছেন। যে কেউ বা সাধারণ কোনো পাঠক এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে ইতিহাস থেকে ‘বিভ্রান্তিকর’ শিক্ষা নিতে পারেন বলে আমাকে সেই বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে হচ্ছে।
মানিকলাল দেওয়ান তার লেখায় যেমন স্নেহ কুমার চাকমাকে উগ্রবাদী এতগুঁয়ে ও ভাবাবেগপ্রাপ্ত উন্মাদ হিসেবে চিত্রিতকরার চেষ্টা করেছেন,তেমনি এই বৈশিষ্ট্যের কারেণে যে পার্বত্য চট্টগ্রামেরজনগণ আজ কষ্ট পাচ্ছে, দুঃখভোগ করছে তা-ই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। ইতিহাস থেকে এই বিভ্রান্তিকরশিক্ষা আমাদের বিভ্রান্তির দিকে নিপতিতত করতে পারে।
তিনি বলতে চেয়েছেন, স্নেহকুমার চাকমার উদ্ধত স্বভাবের কারণে তদানিন্তন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিসি জিএল হাইড ‘মৃত্যৃুকালেও হুল ফুটিয়ে’ দিয়ে গেছেন। এবং এতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের আশা আকাঙ্খা’ ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়।

লেখকের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি-

” যুবক নেতা স্নেহকুমারচাকমা খুবই মেধাবী কিন্তু উগ্রবাদী ছিলেন। তদানিন্তন ডিসি জি. এল হাইডের সাথেও তার ভাল সম্পর্ক ছিল না। ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান জন্মের ঘোষনারপরে পরেই আনুমানিক রা্ত ১২ টায় প্রশেসন সহকারে স্নেহ কুমার ডিসি জি এল হাইডকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ভারতের পতাকা উত্তোলন করতে বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তদুপরি যেকোন দেশের জাতীয় পতাকা রাতে উত্তোলন করা অশোভনীয় হলেও স্নেহকুমার পীড়া পিড়ি করতে থাকেন। অন্যদিকে সঙ্গে নেওয়া লোকজনকেও তিনি ক্ষেপিয়ে তুলেন। নিজের ইজ্জ্বত রক্ষার্থে পরের দিন ১৫ আগস্ট ভোরে ডিসি সাহেব পতাকা উত্তোলনের জন্য আসতে বলেন। সহজে বুঝা গেল যে, সেইদিন স্নেহ কুমারের এহেন ব্যবহারের জন্য তিনি অত্যন্ত বিরক্তবোধ করেছেন।”

এই কথা বলার মাধ্যমে লেখক ড. মানিক লাল দেওয়ান বোঝাাতে চেয়েছেন, জি এল হাইডের সাথ অপমানজনক ব্যবহারের কারণেও জি এল হাইড পরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভৃুক্ত না করানোর জন্য নানাভাবে প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করেছেন!

খুবই তাজ্জ্বব হবার মতো অনুসিদ্ধান্ত বটে!

ভাবতেই জেরবার হতে হয়! একজন সাধারণ জেলা প্রশাসকের সাথে ‘দুর্ব্যবহারের কারণে’ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ইতিহাসের আজকের এই পরিণতি! সাদাচোখে সাধারণ অনেকেরে কাছে এই ‘যুক্তি’ পেটে যে ভালোমতো ঢুকতে তা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়! কিন্তু আমরা বুঝি না, একজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি কীভাবে এই যুক্তিকে অন্ধভাবে মেনে নিলেন!?

তিনি তার লেখায় লিখেছেন-

১৫আগস্টের পরে ‘ডিসি জি এল হাইড একদন্ডও আরঅপেক্ষা করলেন না। তিনি তাঁর প্রিয় ঘোড়াটিকে নিজে গুলি করে মারলেনিএবংনিজেই বাংলোর পশ্চিম পার্শ্বে কবর দিলেন। তারপর একটি লঞ্চে করে সোজা চট্টগ্রাম ও পরে কলকাতায় চলে গেলেন। ১৫ আগস্ট ছিল রাঙ্গামাটি থেকে তাঁর চিরবিদায়ের দিন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,কোনপার্বত্য নেতা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাগ্য নির্ধারণে হাইডের সহযোগিতা চাননি। ধারণা করা যায়, হাউড পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যথাস্থানে জোর ওকালতি করেছেন।”

এবং লেখকের এই অনুসিদ্ধান্ত গ্রহণেরপ্রতি আমারও আমাদের তীব্র সমালোচনা এখানে ব্যক্ত করতে হচ্ছে।

তিনি কী জানেন না যে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হবার পরিণতি ১৫ আগস্ট বা তার পরে নয়,বরং অরো অনেক আগেই নির্ধারিত হয়েগিয়েছিল?!?

স্যার সিরিল র‌্যাডক্লিফ, যিনি ভারত বিভক্তির মূলে ছিলেন, তিনি বেঙ্গল বাউন্ডারী কমিশনের ১২আগস্টের একটি প্রতিবেদনে স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ৩ শতাংশ মাত্র মুসলিম ধর্মাবলম্বী। উক্ত প্রতিবেদনে তিনি চট্টগ্রাম জেলার মধ্যেই রেখে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত কথা বলেছিলেন।
তাছাড়া ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত একটি লেখায়ও বলা হয়েছিল যে, ১৯৪৭ সালের ১২ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে ভারতবর্ষ ভাগ করার চূড়ান্ত পরিকল্পনা স্যার সিরিল র‌্যাডক্লিফ করে ফেলেছিলেন। উক্ত লেখায় তিনি আরো বলেছিলেন, পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবংসরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলকে উদ্ধৃত করে ভাইসরয়ের রিফর্ম কমিশিনার ভিপি মেনন তাকে বলেছিলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি প্রতিনিধিদলকে তারা আশ্বস্ত করেছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানভুক্ত হবে না। এবং এজন্য ১৫আগস্ট স্বাধীনতা ঘোষনারআগে কোন অংশ কোন দেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার পুরো বিবরণ দুই নবগঠিতব্য দেশের প্রতিনিধি দলকে না দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়াবলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ,এতে প্রতিনিধি দল বৈঠক বয়কট করতে পারে।
উক্ত প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে যে, ১২ আগস্টেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


সুতরাং, ডিসি জি এল হাইড অপমানে জর্জরিত হয়ে ১৫ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বেরিয়ে সত্বর দিল্লী পৌছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তদবির করেছিলেন, এই ধরণের গাঁজাখুরি ইতিহাস বা কাহিনী সৃষ্টির চেষ্টা যে কতটা বালসুলভ তা হয়তো আমরা ধারণাই করতে পারি না!


Wednesday, August 2, 2017

তাজউদ্দীন আহমদঃ নতুন আলোকে

সাদাসিধে তাজউদ্দীন আহমদ

তারিখঃ ২২ জুলাই, ২০১৭
তাঁর যখন ৪৫ বা ৪৬ বছর বয়স তখন তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ নেতা। তাঁর কন্যা শারমিন আহমদ যেমনটি বলেছিলেন, তাজউদ্দীন ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক, দূরদর্শী চিন্তার অধিকারী একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, একজন পরিশুদ্ধ চিন্তাসম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি নিজ দায়িত্ব ও কাজে ছিলেন কর্তব্যনিষ্ঠ। তিনি সততাকেই নিজের পুঁজি হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। এগুলো কথার কথা নয়, তাঁর সারাজীবনের কাজে তিনি এই প্রমাণই রেখে গেছেন।
শারমিন আহমদ লিখেছেন, 'সত্যি শক্তি। সত্য তার আপন বলে বলীয়ান।' এই নীতির একনিষ্ঠ অনুসারী আব্বু লড়েছেন একাকী।' তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ এক লড়াকু, যিনি নিজের জন্য কিছু প্রত্যাশা করেননি। যতদিন এই লড়াকুকে শেখ মুজিব কাছে রাখতে পেরেছেন ততদিন শেখ মুজিব ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অপরাজেয়! কিন্তু দেশ স্বাধীন হবারর পরে যেইদিন তিনি তাজউদ্দীন আহমদকে দূরে সরিয়ে দিলেন, সেইদিন থেকেই যেন তাঁর 'পারমী' বা 'খোদার করুণা' কৃশ আবছা ঝাপসা হতে শুরু করে!
তবে তাজউদ্দীন আহমদ এমন ধাতে গড়া এক মানুষ, যিনি এত সকল কিছুর পরেও, নিজের 'নেতা'র কাছ থেকে এতো অবহেলা, বঞ্চনার শিকার হবার পরেও কোনোকালেই, কোনোসময়েই 'নেতা'র বিপরীতে কোনো অমংগল কাজ করা দূরে থাক, মনেমনেও সেই কামনা করেননি।
এই এক লৌহদৃহ মানবিক মননের অধিকারী ব্যক্তি আজ থেকে ৯২ বছর আগে ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুরের কাপাসিয়া দরদরিয়ায় জন্মেছিলেন। ধন্য এমন মানব জনম, সার্থক এমন জীবন যাপন!
এই ব্যক্তি, যিনি মনেপ্রাণে ছিলেন এই দেশেরই বৃহত জাতির একজন, বাঙালি। আবেগে চিন্তায় তিনি ছিলেন খাঁটি আদর্শবান অনুসরনীয় একজন 'বাঙালি'ই, তবে একইসাথে মানবতাবাদীও। কিন্তু, অত্যন্ত বেদনার যে,
আজ বৃহত 'বাঙালি' জাতিগোষ্ঠির মধ্যে এই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ভাবার মতো নেই কেউ, তাঁর আদর্শকে তুলে ধরে অনুসরনীয় হবার মতোও নেই এমন কোনো অনুসরনীয় কোনো ব্যক্তিত্ব!
তিনি বলেছিলেন, ‘শুধু ভালো বক্তৃতা করে দেশের মানুষের মঙ্গল করতে পারবেন না। বক্তৃতা সত্যি হতে হবে। মানুষের সত্যিকার অবস্থা আগে তুলে ধরে তারপর প্রকৃত নির্দেশ দিতে হবে। এর নাম নেতৃত্ব। এটা খুবই কষ্টকর। কিন্তু সত্যিকার খায়েশ যদি হয়ে থাকে তা হলে তা করতে হবে। কিন্তু এছাড়া শুধু বক্তৃতা করে বেশি দিন নেতৃত্ব করা যাবে না।’(সূত্রঃ শুভ কিবরিয়া, বাংলা ট্রিবিউন)
আজকাল কথা বলার লোক বা ভুরি ভুরি ভালো ভালো কথা লেখার লোক তো কম পাওয়া যায় না! বরং ভালো ভালো কথা বেশিই যেন বলা হয়ে থাকে, লেখা হতে থাকে! টিভি টকশো'তে চোখ কান দিলেই তা গোচরীভূত হতে থাকে!
আজ ২৩ জুলাই ২০১৭ পর্যন্ত যদি তাজউদ্দীন বেঁচে থাকতেন তবে তাঁর বয়স হতো ৯২। এই বয়সেও অনেকেই বেঁচে থাকেন। শুনেছি মালয়েশিয়ার মাহাথির মুহাম্মদ এই বয়সে আবার রাজনীতিতে নাকি আসতে চাইছেন।
কিন্তু, তাজুদ্দীন ৫০ পেরোতে পারেননি। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের ২২ তারিখ তাঁকে আটক করা হয়। একই বছরের ৩ নভেম্বর আরো তিন নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ তাজউদ্দীনকে কারাগারে খুন করা হলো নির্মমভাবে।
শেখ মুজিব খুন হবার পরে তিনি নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু 'অপবাদ' মাথায় নিয়ে তিনি পালিয়ে যেতে চাননি। তবে তিনি যদি পালিয়ে যেতেন, রক্ষা করতেন নিজেকে, তিনি যদি আবার হাল ধরতেন দেশ গঠনের কাজে, তবে দেশের ইতিহাস কি অন্যভাবে লিখতে হতো?
যা হয়নি, তা হবার নয়। তাই ও কথা তোলা থাক অগোছালো!
এই সত্যটিই আজ প্রকটিত হয়ে আমাদের শিক্ষা দিক যে, 'নেতা যখন অসৎ, অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ণ ও সুবিধাবাদীদের কাছে টেনে নেন এবং তাদের প্রশ্রয় দেন তখন ভয়াবহ পরিণাম শুধু তার ভাগ্যেই ঘটে না, পুরো জাতিকেই তার মাশুল দিতে হয়। জাতি পিছিয়ে যায় শত বছর।'(তাজউদ্দীন আহমদ, নেতা ও পিতা; পৃঃ ১৭৫; শারমিন আহমদ)
তবে নেতা বা নেতৃত্ব যখন জাতীয় উত্তুঙ্গ উত্তাল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে সঠিক দিশা হাজির করে নেতৃত্ব দিতে অপারগ হন বা সঠিক ভুমিকা রাখতে সমর্থ না হন, তবে তখনও একটি জাতিকে, একটি জাতিগোষ্ঠি ও একটি অঞ্চলের জাতিসমষ্টিকে মাশুল গুণতে হয়, পিছিয়ে যেতে হয় আরো বহু বছর।

Sunday, July 30, 2017

ফ্যশন অর এসটাইল ইন দ্য লাড়েই!-এগ্গান তেম্বাঙ



তারিকঃ ২৭ জুলাই, ২০১৭

এ লেঘাগান লিঘিবার কারণ অহলদে গুরো ভেই ফেসবুক বন্ধু সুদর্শী চাকমা মিশিলঅত সানগ্লাস চোঘোত দে’না লোইনেই এগ্গান লিককে। সিওত ত্যা সানগ্লাস ন দিবার কধা কুইয়্যে।সাদাচোঘে বিষয়আন লোইনেই আজলে কধা কবার তেমন নেই মনে অহবঅ। হালিক,আমি আমা সমাজ পরিবর্তনঅর ক্ষেত্রে বা আমার লাড়েইআন আক্কোই নেজেবার ক্ষেত্রে সাদাবাওচ্চে তুত্রিনিংতাত্রাং এত চিগোন চাগোন বিষয় বা সমস্যা লোইনেই এতঅ সময় কাদেই দিই যে, দেঘা জাইদে আমি আজলে শেজেনদি আমা লাড়েইওর মূল উদ্দেশ্যআন’ওই পুড়িই ফেলেইওই!
ম’র এই আলোচনা বা তেম্বাঙআনঅত মুই আলোচনাগুরিনেই সেই বিষয়আন তুলি ধুজ্জোং। আমি জুনি আজল কাম তুত্রিং নাত্রিং কাম ভাগ ন গুরি তোইলে শান্দিবাইনীউনে তারা জিঙানী লাড়েইওত নিজঅর জিঙানির বেকভাগ দিইনেই বয়চকালে জ্যাএন উভোককাককাক উইওন, বজর বিদি জাদে জাদে কমলে কমলে আমা উগুরেও সে দঝাআনি ব দঝা ভেদা দ্যাএ সিআন থাআরও গুরি ন পারিবং!
লেঘাগান মন দিইনেই কেউ পুড়িনেই কিজুকাজু সজাগ চোকমুফুত্যা অহলেও মনআন হুজি অহবঅ!

লেঘাগানঅর শুরু...

বাংলাদেঝ'অত ওবোচ্চো 'বিপ্লবী মিশিল' দেঘা ন জাই। আর 'সান গ্লাশ' বা 'চোকশমা'আন বেধক্যা সা'আন দেঘেলে'য়ো 'সাংনগ্লাশ' দ সমচ্যা নয়! সমচ্যা অহলদে 'লাড়েই'আন বা সংগ্রাম বা 'বিপ্লব' বা সংগ্রাম'আন। মাও বা চে বা কাস্ত্রো সিগেরেট হ্যানেই দ তারা বিপ্লবী!তারারে দ কনঅজনে ‘;অবিপ্লবী’ ন কলাক!

ভাব দেঘানা, ভাব ল'না, ভাব মারানা বা এসটাইল দেঘানা সমারে জাদে বা জেকজেক গুরিনেই লাড়েই গরানা, লাড়েইওত থানা, লাড়েই'আন'অরে নিজর গুরি ল'না ভিদিরে পার্থক্য দ আঘে! আর লাড়েইওর কারণে এসটাইল গরানা, সানগ্লাশ দি পানাহ, তুক্যা দেনা সি'আন দ লাড়েইওর কারণে। হালিক অহয়'আন'অত নয়'আনত এসতাইল মারানা সি'আন দ 'বিপ্লবী' 'সংগ্রামী' কাম নয়! সি'আনি কধা বাদ, এই 'হাচ্চত' স্বাভাবিক সংস্কৃতি বা মূল্যবোধ'ওর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য'ও নউয়।

এ উপমহাদেশ'অত যারা সংগ্রাম গরন তারার কিজু 'ডগমা' আঘে। এই দেঝত যারা 'বিপ্লবী' হলান তারা সমাজ জাত দেঝ লোইনেই নিরাল নিবিড় গুরিনেই কাম ন গুরিনেই 'মদ হানা' 'শুগর এহরাহ ' হানা বা সমাজ'অত জি'আন 'ট্যাবু' সি'আন ভাঙানা'আনঃঅরে 'বিপ্লবী কাম' মনে গরন। আমা সিদু বিপ্লব বা সংগ্রাম যারা গরন তারা 'মদ ন হানা' ই'আন'অরে 'সংগ্রামী কাম' মনে গত্তাক বা এবঅসং মনে গরন। সেনোত্তেই সমাজ'অর স্তর ন বুজিনেই সমাজ'অত যারা মদ হান তারারে মদ'অ ভাদি বোগেই দোন। হালিক এত বিধিনিষেধ দিবার পরেও, এতঅ শাস্তি দিবার পরেও,এতঅ চেরেস্তারপরেও মদ হানা মদতি অহনা বন্ধ ন অহয়। অন্য কিত্তে চীন দেঝত, কিউবা সিদু তারা মদ হেইনেই বিপ্লব গুজ্জোন। আজলে পোল্লেম সমাজ লোনেই স্টাডি ন গুরিলে সমাজ বোদোলেবার মতন যুগোপযোগী কর্মসূচি ন ললে দ সমাজ বোদোলেবার আঝা বা বোদোলেবার কামআনঅত আমি ফেইল মারিবঙ! মদতদ নঅ হেইনেই সন্যাসব্রত ধারণ বা সাধু ‘সাজানাহ’ বা সেনজান কাম গরানা মানে দ রাজনৈতিক ভাষায় 'ভাববাদী' অহনা। অর্থাৎ বস্তুবাদী বা দ্বন্দ্বমূলক ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দৃষ্টিভংগী বা সঠিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগী অরজন ন গরানা। যারা আগেদি সমাজ বোদোলেবার বাগকাম আহদঅত লুইওন তারা দ বানাহ এই ভাব ন মারঅন!

আজলে আমি অহত্তে অহত্তে সমাজ'অ ভিদিরে থেইনেই নানা চিন্তাগত সংস্কার বা দৃষ্টিভংগী লালন গুরি। সে দৃষ্টিভংগী অবশ্যই আমার সংস্কৃতি বা সংস্কার। সি'আনর কারনে কোনো এগগান জিনিচ বা বিষয়'অরে গম বা ভান্যা বা সা'চ্যা বা বেসাচ্যা(সাজ'অন, বেসাজ'অন) কোই। হালিক সি'আন'অ সমারে সমাজ পরিবর্তন'অর সম্পর্ক আপতিক মাত্র। সি'আনঃঅর স্ট্যাটিক 'গম ভান্যা' কিজু নেই। গম আর ভান্যা স্ট্যান্ড'অ উগুরে বা অবস্থানগ্রহণঅ উগুরে নির্ভর গরে। আর 'বিপ্লবী' বা 'সংগ্রামী' রাজনীতি বা এই ধরনঃঅর রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগী উন্নততর মতাদর্শ ধারণ গরে। উন্নত বা উচ্চতর মতাদর্শ মানেই সংস্কারমুক্ত নৈর্ব্যক্তিক চিন্তাচেতনার মাধ্যমে সমাজ বিশ্লেষণ এবং সমাজ পরিবর্তন'অর কাম গরানা সেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভংগীর ভিত্তিতে। তবে কধা আঘে, সমাজ পরিবর্তন গুরিলে সমাজ'অত উপযোগী কর্মসূচিই লো পুরিব'অ।

সমাজ পরিবর্তন গুরিবার চ্যালে সমাজ'অর উপযোগী কাম গরা পুরিব'অ। মদ'অ ভাদি বোগেই দে'না জ্যান সঠিক কর্মসূচি নয়, সেনজান মদ হেবার ঢালাও সুবিধে দেনাও সঠিক কর্মসূচি নয়। কুবোত দাড়ি বজা পড়ে, কোন জাগাত কমা, কোন জাগাত হাইপেন, সেমিক্লোন, প্রশ্নবোধক চিহ্ন দি'ইয়া পরে সি'আন যারা লেঘানাত এক্সপার্ট তারাত্তেই নিশ্চয় হবর পা'আ পড়ে। আর যারা্ দেচজাদঅর কাম গুরিবাক তারাততুনো সমাজচোরে স্টাডি গুরিনেই কন কামআন আগে গরা পুরিবঅ, সমাজঅর কন সমস্যাআন মৌলিক,কুবান সেকন্ডারি বা গৌণ সিআন তলবিচ গুরিনেই বাজি ল’বার বাস্তবিক রাজনৈতিক জ্ঞান থাআ পুরিবঅ।
আমি জুনি সমাজ লোইনেই গভীর অনুসন্ধান ন গুরিনেই কুড়ো আঙত্যেদে ধক সমাজ লোইনেই কাম গুরি তোইলে দ আমি জাদঅর ভালেদ গুরি ন পারিবং। বরং আমার সে কামআনির কারণে আমা জাদঅর হারাপ কিজু অহবারই সম্ভাবনা বেচ আগে। আর সে কারণেই জাদঅর ভালেদ গুরিবার মত এতঅ কাম আপাতভাবে অহবার পরেও আমা জাদঅর এতঅ দুর্বল অবস্থা আমি লাআক পেইর। কারণ যারা বিপ্লব গুরিবার বা সমাজ বোদোলেবার কধা তারা তিলে তিলে কুড়ো(মুরগী) আঙুত্যে পারাআ সমাজ লোইনেই আঙুদা আঙুদি গুজ্জোনদে বানাহ। চেুদোমেএ উদোনআন আধং গুজ্জোন পারাআ উইয়্যে।


আমা জাদঅর যারা বিপ্লবী হোলান বা যারা সমাজ লোইনেই কাম গরঅন তারার আরেগ্গান সমস্যা দেঘা দেএ।
গভীর সঠিক রাজনৈতিক চেতনা আর দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন ন গুরিবার কারণে এ বালখিল্যতা বা চিগোনগুরো ধক মানসিকতা দেঘা দেএ। আমি দেঘি যারা লাড়েই গরঅন বা লাড়েইও থান তারা লাড়েই গত্তে গত্তে নিজঅরে পোললেম জমঅর বিপ্লবী বানেই রাঘান। হালিক হানক্কন পরে সে সলংবোদোলেইনেই শুন্য ডিগ্রিততুন তিনশষাইট ডিগ্রি বুদুলিনেই বিরাট প্রতিবিপ্লবী বা প্র্রতিক্রিয়াশীল ওই জানদোই। বিশেষগুরি সমাজ বোদোলেবার কর্মসূচি লোইনেইও তারা শুন্য ডিগ্রিততুন তিনশষাইট ডিগ্রি বুদুলি জাআদে দেঘাজাই।ধরা জোক,মিলে ষ্বাধীনতার কধা। মুই ম আলোচনাআনঅত বোঝেবার চেলুংগে, সমাজঅর স্তরভেদে সমাজ পরিবর্তনঅর কাম গরাপরে। হালিক ইআন ক’বার পরে নারী স্বাধীনতা লোইনেই ,মুই কী আমা সমাজঅত মিলেউনোরে পশ্চিমা ধাঁচে স্বাধীনতা দিবার চাআং কিনা কোআ অহলঅ। সে জবাবে জবাবে মুই লিক্কোঙ- নারী স্বাধীনতা মানে নারীর মর্যাদা, নারীর স্বকীয়তা স্বাতন্ত্র্যরে স্বীকার গরানা, নারীর সামাজিক দায়িত্ব কর্তব্য বিষয়ে সচেতন অহনা। আর দায়িত্ব করতব্যবোধ অহলদে পারস্পরিক। নারীরে সম্মান দি'আ পুরিব'অ, নারী সমাজ'অর সম্মান বজায় রাঘেব'অ।ইক্কো সানগ্লাস দেনা ন দেনা লোইনেইও বা অন্য বিভিন্ন ধুক্কেন সমস্যা লোইনেইও সে কধাআন কোআ জাই।
মুই নিজে জ্যাক্কেনে হাগারাছুরি পাআটি(পার্টি) কাম গুজ্জোঙ,স্যাক্কেনে দিক্কোঙ, আমি হবংপুজ্জে আদামঅত স্কুলঅ পো-গাবুজ্জেউনো ভিদিরে শৃংখলা আনিবার জেইনেই কিজু কিজু সমাজঅর অতি উৎসাহী মানজে স্কুল পো আর গাবুজ্জেউনোরেেএককধায় ‘জেলহানা’ত রাঘাই পারাআ রাঘেবার পরামর্শ দিলাক! হালিক, কিজুদিন বাদে দেঘা জেলঅদে এ চরম ‘বিপ্লবী’ চিদে গুরিইএ মানুচ্চুনোর ‘বিপ্লব’ মাধা্-আগা দেঘাইও নেই! শেজেনদি আজল কামআন বুদি রাঘিইওন! ইআনঅরেই কঅবার চিওঙ শুন্য ডিগ্রিততুন তিনশষাইট ডিগ্রি উল্লানা। আমা সমাজ বা জাদঅর এ হাচ্চত সমাজঅ ভিদিরে, রাজনৈতিক দলঅ নেতাউনো ভিদিরে, মানজো ভিদিরে আহরে আহরে কেজেএ কেজেএ আঘে!

আমি সমাজ'অর সেকন্ডারি সমস্যালোই মশগুল থ্যানেই দ 'বিপ্লব' 'সংগ্রাম' আক্কোই নেজেই ন পারিবং!

সমাজ'অর নানা তুতত্রিং নাতত্রিং সমস্যা আঘে। এধকভিলোন দেঘা জিইয়ে, আমি কোন সমস্যাগান মুখ্য আর কোন সমস্যাগান গৌন সি'আন তলবিচ ন গুরিনেই বানা তেম্বাং সুলুক গুরি গুরি থেই। সেনোত্তেই আমি তলা লা'আপ ন পেবার অক্ত অহয়! আমি দ ব্যাগে সমাজ'অ ডাক্তর নয়। ধরা জোক এগগো রুগি ডাক্তর'অ সিদু মাধাপিড়েত্তেই জেল'অ। ডাক্তজ্যে দ বানা মাধা পিড়ে কিনে দারু ন দিব'অ! ত্যা চেব'অ কী কারণে মাধা পিড়ে অহর। সি'আন চোঘোর কারনে অহলে চোঘও দারু দিব'অ। প্রেশার'অর কারনে অহলে আরেকধুক্কেন দারু বা অন্য কারণে অহলে আরেকধুক্কেন দারু দিব'অ। সেনজান গুরি সমাজ'অর যারা বা জ্যা ডাক্তর ত্যা বা তারা সে অনুযায়ী দারু জোগওলেবাক, বা জোগোলে পেবাক। জোগোলে ন পারিলে দ অসুক বা পিড়ে গম ন অহব'অ, বরং আরো জটিল অহব'অ!
আপাত মুই ইআন লোইনেই ম আলোচনা ইওত থুম গুরিলুঙ।

জেনারেল অং সান General Aung San




তারিখঃ ১৯ জলাই, ২০১৭

বার্মা, এবং বর্তমানে মিয়ানমার নামে পরিচিত দেশটি গঠনে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁর নাম অং সান, জেনারেল অং সান। আজ ১৯ জুলাই, ২০১৭ তাঁর ৭০ তম মৃত্যুবার্ষিকী। মিয়ানমারের জনগণ আজ তাঁকে স্মরণ করছে।

দেশটি স্বাধীন হবার মাত্র ৬ মাস আগে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৯ জুলাই আততায়ীর হাতে শহীদ হন।

তাঁর দেশের বিভিন্ন জাতিসত্তাসমূহের মাঝেও তিনি ব্যাপকভাবে সম্মানিত রাষ্ট্রনেতা হিসেবে বিবেচিত হন।

বার্মা স্বাধীন হলে অন্যান্য জাতিসত্তাসমূহকে সমমর্যাদার ভিত্তিতে অধিকার প্রদান করার প্রতিশ্রুতি তিনি প্রদান করেন। এ উপলক্ষে তিনি জাতিসত্তাসমূহের প্রতিনিধিদের সাথে 'পাঙলঙ এগ্রিমেন্ট' নামে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। এই চুক্তি এখনো মিয়ানমারে জাতিসত্তাসমূহের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে প্রধান ভিত্তি বা পথনির্দেশদাতা হিসেবে বিবেচিত হয়।

অং সানের কন্যা অং সাং সু'কি এখন 'স্টেট কাউন্সিলর' হিসেবে দেশটির শাসনক্ষমতার নেতৃত্বে রয়েছেন।

শিল্প-সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা

তারিখঃ ২৪ জন, ২০১৭
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে হলো। অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো আলোচ্য বিষয় খুবই সহজ মনে হতে পারে! কিন্তু এই আলোচনার একটি জটিল 'অমীমাংসিত' প্রপঞ্চ রয়েছে। অনেকটা 'ডিম আগে নাকি মুরগী আগে' প্রশ্নটির মতো একটি উত্তর প্রাপ্তির বিষয় জড়িয়ে রয়েছে! 
শিল্প-সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা থাকা বা না থাকা বা এই ধারার প্রাধান্য থাকা না থাকার সাথে সাথে নিচের প্রশ্নটি নিয়ে আমরা ভাবতে পারি!
'সংগ্রামী ধারার সাহিত্য আগে সৃষ্টি হবে নাকি সংগ্রাম জারি থাকা বা সংগ্রামী ধারা জোরদার' হওয়া আগে সৃষ্টি হতে হবে?
সংগ্রাম যদি জারি না থাকে বা যদি সংগ্রাম বা 'বিপ্লব' জোরদার না হয় তবে সংগ্রামী ধারার শিল্প ও সাহিত্য চলমান সমাজ জীবনে কী প্রাধান্য পাবে? অথবা প্রথমে সমাজের শিল্প ও সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা সৃষ্টি হবে, তারপরে পরবর্তী প্রেক্ষাপট হিসেবে আসবে জোরদার সংগ্রাম?
কখন একটি চেতনামূলক গান মানুষকে জাগাতে পারে? 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে' গানটির আবেদন কি '৭১ সালের আগে ছিল? নাকি '৭১ এর ৯ মাসের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে এই গানটি 'আবেদনময়ী' হয়ে মানুষকে জাগিয়েছিল?
শিল্প ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনার সময় এই বিতর্কটির মীমাংসা তবে কি আবশ্যকীয়ভাবে সামনে আনতে হয়/হবে?
বিষয়টি নিয়ে কথাবলতে হোল, কারণ এ নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে আমরা একে অন্যকে দোষারোপ করে থাকি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে যে সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব চলছে তাতে আমরা এই বিষয়টি নিয়েও নানা ধোঁয়াশামূলক চিন্তাভাবনা করি। অথচ, সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে বা সমাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে নেতৃত্ব দিতে গেলে বা এ নিয়ে ভুমিকা রাখতে হলে আমাদের এই বিষয়টিকে সিরিয়াস আলোচনা করে মীমাংসায় যেতে হবে। 
আপাতত এটুকু মাত্র যোগ করলাম। 

রাজীব হুমায়ুন স্যার চলে গেলেন


তারিখঃ ০৫ জুলাই, ২০১৭
দোষেগুণে তিনি মানুষ ছিলেন। তাঁর ছাত্র ছিলাম আমি এবং আরো অনেকেই ছিলেন। বন্ধুদের অনেকে তাঁকে সমালোচনা করতো। আমিও মাঝে মাঝে তাঁর কথা শুনে মেলাতে পারতাম না! 
তিনি বারবার বলতেন, তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রী/বিরোধী দলীয় নেত্রীর শেখ হাসিনা'র বন্ধু ছিলেন। তাঁকে সরাসরি প্রশংসা করলে তিনি যে খুশি হতেন তা জানা ছিল। তিনি সুযোগ পেলেই নিজের কথা বলতেন।
তারপরেও তিনি ছিলেন আমার আমাদের শিক্ষক। তিনি ভাষাতত্ত্ব, পরে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন।
আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময় ভাইবা বোর্ডে তিনি আমাকে উক্ত বিভাগে ভর্তি হতে একপ্রকার অনুরোধ করেছিলেন।
কিছুদিন আগে ঢাকায় গিয়ে তাঁর এক আত্মীয়ের সাথে দেখা হয়। এ সময় স্যারের সাথে দেখা করার আন্তরিক ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম। তবে যা হয়, সারাজীবন ইন্ট্রোভারট থাকায় অনেক ইচ্ছে বাস্তবে রূপান্তর করা হলো না। স্যারকে আর দেখতে পেলাম না।
আজ যখন শুনলাম তিনি মারা গেছেন, তখন হঠাত মনটা খুব শুন্য মনে হলো। 
কখন যে দুটো চোখে অশ্রু জমা হলো জানতে পারিনি। তিনি আমাকে হয়তো খুব ভালো বাসতেন। এবং কী জানি এক অন্য কারণে তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করতাম।
আজ মনে হলো তিনি মারা যাওয়ায় একটি তীব্র রোদের সময় ছায়া দেয়া একটি আপন বৃক্ষের পতন যেন আমি দেখলাম।
সম্ভব হলে একদিন তাঁর কবরে গিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাবো।
নিচে Dipongker Goutam নামে একজন ফেসবুক বন্ধুর স্যারকে নিয়ে লেখাটি শেয়ার করলাম
রাজীব হুমায়ুন স্যার আর নেই
----------------------------------------
বিশিষ্ট ভাষাবিদ, নজরুল গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. রাজীব হুমায়ুন মৃত্যুবরণ করেছেন।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ৫ মিনিটে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর।
১৯৫০ সালে সন্দ্বীপে জন্ম নেওয়া হুমায়ুন ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যোগ দেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এবং ভাষাবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সনও ছিলেন তিনি।পুরানো ঢাকার ভাষা নিয়ে তার কাজ ছিলো খুবই উল্লেখোগ্য।
যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর হাতে নির্যাতনে নিহত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা রাজীব হুমায়ুনের বড় ভাই জসিম । তিনি মীর কাসেমের মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন।
চট্টগ্রাম উদীচীর সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার জীবন ও কর্মের প্রতি জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি

লালা ভাইয়ের বিরুদ্ধে 'রাষ্ট্রদ্রোহ' মামলা


তারিখঃ ০৭ জুলাই/ ২০১৭
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা; লালা ভাই। এরশাদশাহী শাসনের অবসান ঘটাতে ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন করেছেন। তবে তাঁর সমসাময়িক অন্য ছাত্রনেতারা এরপরে বিত্তবৈভবপ্রাপ্ত এবং পতাকাশোভিতও হয়েছেন কেউ কেউ। লালা ভাই তাঁর স্বভাবসুলভ স্বাভাবিক ভিন্নচিন্তা, অবিলাসী ও মননশীল মানবিক মন নিয়ে কাজ করে গেছেন রাজপথে ময়দানে। তিনি কী পেরেছেন বা রাজপথে কিছু একটা করতে পেরেছেন কী না তা জানতে পারা যেত না, যদি তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না হোত!
আমরা জানি, সচরাচর তিনি ঢাকায় অনলবর্ষী বক্তব্য দেন। এবং এই বক্তব্যের বিষয়বস্তু অবশ্যই সরকার ও শাসকশেনির বিরুদ্ধে। তবে তাঁর তথ্যপূর্ণ বক্তব্য সাধারণ শ্রোতার জন্য আকর্ষণ সৃষ্টিকারী বলা যায়। যদিও হয়তো, শ্রোতা বিচারে বা সমাবেশে অংশগ্রহণকারী বিচারে হয়তো তিনি জাতীয়ভাবে কোটি জনগণের উপর প্রভাব রাখেন না। তবে তাঁর বক্তব্য যাঁরা শোনেন, তাঁরা তাঁর প্রতি কিছুটা আকৃষ্ট বা নিরাকৃষ্টও হন অবশ্যই। তা না হলে রাজশাহীর চারঘাটের বক্তব্যে আওয়ামীলীগের স্থানীয় শ্রোতাদের তো এতোটা 'হন্তদন্ত' ও হস্তউত্তোলিত ও মামলা রুজু করার জন্য বিশেষ চিন্তিত হবার কথা তো নয়!
তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রত্যাহার হোক এই দাবি রইল।
তিনি রাজশাহীর চারঘাটে কী বিশেষ বক্তব্য দিয়ে 'রাষ্ট্রদ্রোহ' মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন, তাও আমরা জানতে চাই। এতে আমরাও সতর্ক হতে পারবো! কারণ, একে তো ৫৭ ধারার ফারা, তার উপর 'রাষ্ট্রদ্রোহ' মামলা, এতো ভার কেই বা বহন করতে চাইবে! তাই বোঝাটা নিয়ে একটু ধারণা অন্তত এতে পাওয়া যাবে ও সতর্ক হওয়া যাবে!

Sunday, July 23, 2017

লুঙুদু পালাহ- এক, দুই, তিন ও চার

[ফেসবুকে লংগদু পালাহ-১, ২, ৩, ৪ আকারে এই লেখাগুলো লিখেছিলাম। আরো কিছু বিষয়ে লেখার কথা থাকলেও আরো নতুন সমস্যা এসে যোগ হবার কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে তথ্যের মিসিং লিংকেজ থাকার কারণে আর এ বিষয়ে লিখিনি। তবে এই চারটি লেখা একত্র করে ব্লগে প্রকাশ করলাম। ধন্যবাদ]

লংগদু পালাহ-১
তারিখঃ ২৬ জুন, ২০১৭
চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ হলো চাকমাদের চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার কাহিনী। চাকমাদের একটি বিশ্বাস হলো, চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ বা চাদিগাঙ পালিয়ে যাওয়ার গীতিকাহিনী যেখানে সেখানে গাওয়া যায় না। যদি এই গীতিকাহিনী কোনো গ্রামে গাওয়া হয়, তবে সেই গ্রাম থেকে সবাইকে পালিয়ে চলে যেতে হয় বা সেই গ্রাম চাকমাদের হারাতে হয়। চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ’র মতো চাকমাদের এখনো নিজেদের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হতে হয়। বিগত ৪০/৪৫ বছরের মধ্যে চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ’র মতো চাকমাদের কতো গ্রাম যে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তার সঠিক হিসাব আসলে কোথাও নেই। কিন্তু যেই গ্রাম বা এলাকা তাদের ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, সেই গ্রাম বা এলাকায় কেউ চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ না শুনেও তাদেরকে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। অর্থাৎ, চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ বা গীতকাহিনী শুনলেও যে চাকমাদের নিজেদের গ্রাম ছেড়ে যেতে হবে তা হয়তো সঠিক নাও হতে পারে।
চাকমাদের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য জাতিসত্তারও নিশ্চয়ই এই ধরণের গীতিকাহিনী থাকতে পারে। অথবা নাও থাকতে পারে। তবে কেউ যদি লংগদু এলাকার জনগণের দুঃখের কাহিনী গীতিকাহিনী হিসেবে চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ’র মতো করে রচনা করতো, তবে তা শুনতে কেমন হতো জানা নেই। চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ এমন করুণভাবে গাওয়া হতো যে, যারা এই কাহিনী শুনতো তাদেরকে কাঁদতে হতো। কেউ কি লংগুদুবাসীর দুঃখের কথা করুণ সুরে লংগুদু পালাহ হিসেবে রচনা করতে এগিয়ে আসবেন?
সে যাই হোক, আমি এখানে লংগুদুবাসীদের দুঃখের কাহিনী বর্ণনা করার সাহ দেখাবো না। তবে সেখানে গতকাল গিয়ে যা দেখে এসেছি এবং শুনে এসেছি তার কিছুটা বর্ণনা করার চেষ্টা এখানে করবো।
জীবনের শেষভাগে এসে অশ্বিনীকুমার কার্বারীর উপলব্ধি
অশ্বিনী কুমার চাকমা। তিনি তিনটিলা গ্রামের কার্বারী। বয়স প্রায় ষাট বা সত্তরের কাছাকাছি। বেঁটেখাটো মানুষ। সবসময় হাসিখুশিই থাকেন। তার ঘরও এবার পুড়ে গেছে। ১৯৮৯ সালের ৪ মে প্রথমবার তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে গিয়েছিল। সাথে তাদের গ্রামও পুড়ে গিয়েছিল। আমরা একসাথে তিনটিলার পোড়া ঘরগুলো দেখতে গিয়েছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে তিনি বললেন, সবকিছু ধ্বংস হবার পরে, সবকিছু পুড়ে যাবার পরে এখন তিনি আর নতুনভাবে সবকিছু গড়ে তোলার আশা করেন না। একজীবনে আর কতোই বা সম্ভব? কত কষ্ট করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, দীর্ঘ বছর তিলতিল পরিশ্রম করে একএকটি পরিবার নিজেদের সম্পদ-সম্পত্তি বাড়িয়ে তুলেছিল এবং ঘরবাড়ি তুলেছিলো। একটু শান্তির আশায় তারা এই ঘরবাড়ি তুলেছিল। জীবনের বাকি সময়টা সুখে শান্তিতে তারা কাটাতে চেয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালের পরে আবার তাদের শেষ বয়সে এই দশায় পড়তে হলো। তিনি কোনো প্রকার বিরক্তি ও দুঃখ না দেখিয়ে হেসে হেসেই বললেন, ’এই জিঙানিত আর নুও কিজু গুরিবার আঝা ন গরঙআর। গুরিলে পো শা’উনে গুরিবার চেরেস্তা গুরি পারঅন। আমি দ আর পারিদঙ নয়। বয়চ দ ওই জিএগোই, কদক আর পারে আর?’
জুম্ম জনগণের এই এক আপদ! দুঃখের কথাও তারা এমন হেসেখেলেতাদের জীবনের দুঃখ বেদনার কথা বলে যে, মনেহয় এই দুঃখ-কষ্ট কিছুই নয়! আসলে প্রতিনিয়ত দুঃখের মাঝে থাকতে থাকতে দুঃখ ও সুখ এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করতেও যেন আমরা ভুলে গেছি!
অশ্বিনী কুমার চাকমা যে কথা অক্লেশে বললেন, তা যে কত ক্লেশকর, কত বেদনাময় ও খেদযুক্ত তা সাদাকথায় বোঝানো চাট্টিখানি কথা নয়। একজন মানুষ তার জীবনের প্রারম্ভিক পর্বে একবার নিজের বাড়িঘর ধ্বংস হতে দেখার পরে, নিজের আত্মীয়স্বজনকে মারা যেতে দেখার পরে, নিজের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হবার পরে, পালিয়ে পালিয়ে জীবন কাটানোর পরে আবার নতুন করে যখন সে স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। এবং তারপরে জীবনের শেষভাগে এসে সে যদি দেখে যে, সে সারাজীবনে যা সঞ্চয় করেছিল, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তিলেতিলে গড়ে তুলেছিল, তা কারো প্রতিহিংসার আগুনে লেলিহান শিখা হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে, সে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। তখন তার জীবন নিয়ে আর তখন কীইবা ভাবার আছে বা কীইবা ভাবার থাকতে পারে?
তাই অশ্বিনী কুমারেরও আর কিছুই ভাবার নেই! বাকি যা ভাবার আছে তা হলো, মরণ যেন ভালভাবেই হয়!


লুঙুদুত ধজা-পড়া-লড়া-পুড়া হেই পানা পালাহ-২
তারিখঃ ২৬ জুন, ২০১৭
লুঙুদুত জিওংগে আদিক্ক্যেগুরি। এককধায় যেবার কধা ন থ্যালেইও জানা। জেবার আগে তারাত্তেই কী নেজেই দিম চিদে গুজ্জোং। একজন'অর আর কদক তেঙা থাই! শেজেনদি ১০ কেজি আম কিনিলুং। সিউন যারে পারঅং হাবেবার চিদে থেব'অ গুরি নেজেইলুং। লুঙুদুত ম সমারে একজন গুরো ভেই আর মটরসাইকেল চালিয়েবো এল'অ। 
আমি লুঙুসুত জেইনেই পুড়া জিইয়ে আদাম'অত সুমিলং। এগগান আ' পুড়িই জিইয়ে ঘরত পানি হেবাত্তেই উদিলং। সি'ওত কধা অহল'অ ঘর আদ্যান্যা পুড়িই জিইয়ে মানজো সমারে। পরিচয় অহল' একজনদোই, য্যা ভেইয়ে ভেইয়ে মরামরিত তা নেককোরে আহরেইয়ে। তুমি সুবীর ওস্তাদ'অ নাং শুনি থেবা।
আমি আমা হিল চাদিগাং-অর বিজগ'অর এমন এগগান সময় পা'আর গুরির, জিওত ভেইয়ে ভেইয়ে মরামরি দেঘির। আহরেইয়েই আমা পরিচিত অপরিচিত ইত্তোকুদুম। আহরেইয়েই আমা জাদ'অর বাজা বাজা গম মানুচ্চুনোরে। ইওত তারা নাং আর ন তুলিম আর। তবে পোল্লেম পোল্লেম জ্যাক্কেনে জেএসএস এম এন লারমা পন্থীলোই ইউপিডিএফ'অর আইপা'আপি অহর স্যাক্কেনে মুই দীঘিনালা ভৈরফা সিন্দি তারার একজনদোই বেড়েইওং। সে মানুচচোরে লইনেই কধা রু'উত্তেদে, ত্যা আমা মানুচ জেদাবাদে আগুনওত পুড়িই মারেই ফেলেইয়ে। পোল্লেম পোল্লেম আই'পা'আপি লক্কেনে মুই তাল্লোই এক সমারে দিন্নোবো আর রেত্তোবো কাদেইওং। আমি একসমারে চাগালা থিগে বেড়েইয়েই, আমা আদাম্যাউনোরে জাগাজুমি বাজেবাত্তেই সাহজ দেই। তবে পরে ভালকদিন পরে শুনংগে তারে আর'অ কনজনে মারেই ফেলেইওন। তা মোক পো ঝি উনোর কধা মুই এব'অ মনত তুলোং। তারা কেনজান আঘন মুই হবর ন পাং। তবে সে সহযোদ্ধা বড়ভেইবো মুরিবার পরে মুই মনত দুক পিওং। তার নানা ভুলচুক থ্যালেও তার মরানাই মুই নিজ'অ সহযোদ্ধা ধুক্কেন মনত কস্ত পিওং।
লুঙুদুত থাগত্তে সিদু হানক্কন মুই সুবীর ওস্তাদ'অ মোককোলোই কধা কুইওং। তারার সুক-দুঘ'ও কধা বুজিবার চেস্তা গুজ্জোং।
ইঙিরি আদামে আদামে জাগায় জাগায় আমা জুম্ম মানেইওর কত'অ মিলে মা-বোন তার/তারার পো-ভেই-নেক-বাপ আহরেইওন! সুবীর ওস্তাদ'অ মোক্কো কধা চিদে গুরিই মত্তুন মনত উত্তে তারা বেগ'অর কধা।
মত্তুন মনত উত্তে ম বাপপো কধা। মনত উত্তে আর'অ বাপ-জিদু-আজু-দা-হাক্কা ইত্তোকুদুমবলা বা ইত্তোকুদুম ন উইয়ে আর'অ শত শত আমা শহীদ মানেইওর কধা।

লুঙুদু পালাহ-৩
তারিখঃ ২৭ জুন, ২০১৭
১৯৮৯ সালের ৪ মে। লুঙুদুতে যে হামলা হয়েছিল তাতে নিহত হয়েছিল ৩২ জন বা তারও অধিক। ঘরবাড়ি পুড়ে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিল ১ হাজারেরও অধিক। হামলা-হত্যার শিকার হয়ে পাহাড়ি জনগণ জায়গাজমি হারিয়েছিল শত হাজার একর।
লুঙুদুতে ১৯৮৯ সালে সংঘটিত হামলা নিয়ে ব্রিগ্রেডিয়ার সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম লিখেছেন,'.. বাঙালীরা উত্তেজিত হয়ে কতিপয় ভিডিপি সদস্যদের সহযোগীতায় ঘটনার দিন এবং তার পরদিন আগ্নেয়াস্ত্র, দা, বল্লম, কুঠার ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে করল্যাছড়ি, উল্টাছড়ি, শীলছড়ি, বগাপাড়া, আদ্রকছড়া এবং হরকুমার কার্বারী পাড়ায় উপজাতিদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, লুটপাট চালায় এবং লোকজনকে আক্রমণ করে।(পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিপ্রক্রিয়া ও পরিবেশ পরিস্থিতির মূল্যায়ণ; ফেব্রুয়ারি, ২০০১; পৃষ্ঠা-১৩৪)। এই উদ্ধৃতিতে যে সকল গ্রাম বা এলাকার নাম দেয়া হয়েছে তার অনেক এলাকায় এখন পাহাড়ি জনগণ বসতি বজায় রাখতে পেরেছে কীনা তা আমার জানা নেই। তবে সাধারণভাবে পার্বত্য প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায় যে, এই এলাকার শত হাজার একর জায়গা থেকে পাহাড়িরা সেটলারদের কাছ থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে এটাই বাস্তবতা। (যারা এ বিষয়ে জানেন তারা প্রকৃত তথ্য যোগ করতে পারেন)
সে সময় জুম্ম জনগণের উপর যে অত্যাচার অন্যায় অবিচার করা হয়েছিল তার প্রতিবাদ করারও সুযোগ তখন পার্বত্যবাসীকে দেয়া হয়নি। রাজা দেবাশীষ রায় তাঁর এক ফেসবুক নোটে এমনেস্টির উদ্ধৃতি দিয়ে এই তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাঙামাটির জনগণকে বা প্রতিবাদ করার জন্য ঢাকায় পর্যন্ত যেতে বাধা দেয়া হয়েছিল।
সুতরাং, তখন এই অন্যায়ের প্রতিবিধান করার জন্য থানায় গিয়ে মামলা করার চিন্তাও কেউ করার সাহস করেনি। অথবা, মামলা যে করা যায় তা কারো মাথায়ও ছিলো না! অথবা দেশে বিদেশে এ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল সভা সমাবেশ করারও তেমন অনেক কেউ ছিলো না। তাছাড়া তখন দেশে ছিলো সামরিক শাসনের সময়। যে সকল পত্রিকা প্রকাশিত হতো তা ছিল সামরিক সরকারেরই নিয়ন্ত্রণে। এমন পাহাড়ি কোনো সাংবাদিক ছিলেন না বা সাহসী কোনো সাংবাদিক তখন সাহস নিয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে পোড়া ঘরের ছবি তুলতেও আসেননি। বরং ঘটনাকে ভিন্নভাবেই হয়তো তখন দেশবাসীর কাছে তথ্যমাধ্যমের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এবং এতে জায়েজ বা বৈধ হয়ে গিয়েছিল একটি গণহত্যা সংঘটনের। পাহাড়িদের তাদের বাপদাদার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদকেও এভাবেই হয়তো/নিশ্চিতভাবেই বৈধতা দিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
কিন্তু এই আজকের ২০১৭ সালে এসে তার মাত্রা ও প্রকৃতির কিছুটা হেরফের হলেও নীতিগত দিক থেকে অধিপতি শ্রেনীর অবস্থান 'যা লাউ, তা কদু'ই রয়ে গেছে কীনা এই প্রশ্নটি জুম্ম ও সচেতন মহলের কাছ থেকে বারবার প্রকটিতই হচ্ছে।( ড্রাকোনিয়ান ৫৭ ধারা এখন আর সাদাসিধে সোজাসাপ্টা দুর্মুখ কথা বলতে উতসাহিত করে না বটে!)
তথ্য হলো ঘটনাত পরে প্রশাসন বাদী হয়ে সেটলার বাঙালিদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। মামলার ধরণ কী আমরা জানি না। মামলায় ব্যাপক মানুষের নাম উল্লেখ করে প্রকৃত পরিকল্পনাকারী ও হামলা বাস্তবায়নকারীদের আড়াল করা হচ্ছে কীনা তাও স্পষ্ট নয়। এছাড়া পাহাড়িদের দেয়া মামলায় এখনো বৃদ্ধা গুনমালা চাকমা হত্যার বিষয়টি যোগ করা হয়নি। অর্থাৎ যোগ করা হয়নি ৩০৭ ধারা। অন্যদিকে গত ২৫ জুন লুঙুদুতে গিয়ে জানা গেলো, ঘটনার মূলে যারা রয়েছে বলে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে, তাদের মধ্য থেকে ৩৪ জন এরইমধ্যে উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছে। এর মানে হলো যারা হামলায় জড়িত তারা এখন মুক্তভাবেই ঘুরছে, তারা ক্ষতির শিকার পাহাড়িদের সামনেই ঘোরাফেরা করছে।
উপরন্তু যোগ হয়েছে পাহাড়িদের ৪০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা। মামলাটির সত্যতা শুন্যের চেয়েও নিম্নাংকে হলেও তার প্রায়োগিক দৃশ্যমান 'হুমকি ও ধামকি'দেয়ার যে 'বারতা বা বার্তা' রয়েছে, তা আমাদের সবাইকে শুধু ভাবাবে না বলে দুর্ভাবনা ও দুশ্চিন্তারও যে কারণ হবে তা-ই সত্য।
তদুপরি পার্বত্য সমস্যা 'আইনশৃংখলা জনিত' কোনো সমস্যা নয়। মামলা ও পালটা মামলা দিয়ে এই সমস্যার তিল পরিমাণ সুরাহার আশা করা দুরূহ বটে।
রাজনৈতিক দিকটি ও জুম্ম জনগণের অধিকারের দিকটি প্রাধান্যে না আসলে পার্বত্য সমস্যাটির অবস্থা 'সব সমস্যা Problem করে' দেয়ার মতো অবস্থা হবে এই আরকি!?!?

লুঙুদু পালাহ-৪
তারিখঃ ২৮ জুন, ২০১৭
লুঙুদু বাজার। সপ্তাহের শনিবার সেখানে সাপ্তাহিক বাজার বসে। ছিটেফোটা কয়েকটি বাদে বাকি সব দোকান বাঙালিদের মালিকানাধীন।
পাহাড়ে সচরাচর যা হয়, দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাই অপাহাড়ি সেটলার অথবা সাধারণ বাঙালি। পাহাড়িদের জন্য ব্যবসা নিষিদ্ধ তা নয়! তবে ব্যবসা বা দোকানদারী করে টিকে থাকাটা হলো 'কল্পনাবিলাসীতা'রই মতো। কেউ আড়ম্বর করে দোকান দিলো বা ব্যবসার পত্তন ঘটালো। যে কোনো কৌশল বা উপায়ে হোক সেই দোকান বা ব্যবসা বা পুঁজির উপর থাকবে 'শকুনী মামা'র চোখ। শেষে কোনো উপায়ে ঠেকাতে না পারলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ধ্বংসসাধন বা সর্বনাশ করার কৌশল তো আছেই। এক কথায় অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে রাখার কৌশল বলা যায়। তবে এতোসব বিপত্তি বাধার মধ্যেও মানুষ তো আশার মুখ না দেখে বেঁচে থাকতে পারে না।
লুঙুদু বাজারে এখনো পাহাড়িরা খুব কমই যায়। বলতে গেলে এখন বাজার মেলেনা। পাহাড়ি জনগণ এখনো বাজারে যেতে ভয় পায়।
লুঙুদুতে পাহাড়ি ও অপাহাড়ির অনুপাত অনেক আগে থেকেই ব্যালেন্সের মধ্যে নেই। সেটলার ও সাধারণ বাঙালি যেখানে ৫০ হাজার, সেখানে পাহড়ির সংখ্যা মাত্র ১৫ অথবা ১৬ হাজার।
পোড়া ঘরের ভিটেমাটিতে ফেরারও যেন কোনো তাড়া নেই পাহাড়ি জনগণের! ঘটনা ঘটেছে জুন মাসের ২ তারিখ। ২৫ জুন পর্যন্ত ধরলে ২৩ দিন হলো পাহাড়িদের পুড়ে যাওয়া ঘর এখনো আগের মতোই যেভাবে পুড়ে ধ্বংস হয়ে ছিলো সেভাবেই আছে।
ক্ষতির শিকার গ্রামবাসীরা এখনো রাত কাটাচ্ছে দূরে প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে দিন হলেই তারা চলে আসছে তিনটিলা বনবিহারে। সারাদিন তারা সেখানে কাটিয়ে আবার চলে যায় নিরাপদ দূরত্বে।
ক্ষতির শিকার মানুষগুলোর অনেকটা এমন হয়েছে যে, কী আর হবে আবার নতুন করে ঘরবাড়িতে এসে!? নতুন করে ঘরবাড়ি তুলেও আর কী হবে? অনেকটা তিনটিলা গ্রামের কার্বারী অশ্বিনীকুমার চাকমা'র মতো হয়েছে সবার অবস্থা। এই জীবনে যা তিলে তিলে সঞ্চিত ধন, তার আকষ্মিক ধ্বংসসাধনে বিমূঢ় নির্বাক সকলে।
তাদের আগামী যেন থেমে গেছে!
সে যাহোক, আগামীকে রূদ্ধ করার সাধ্য কারোর নেই। তাই স্বাভাবিকের মতো আবার লুঙুদু ঘরপোড়া জনগণ তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে আসুক এই আশা আমরা করতে পারি। লুঙুদুবাসী বা পার্বত্যবাসী বরাবরের মতো দাবি জানাতে পারে জীবন ও ভুমি বা বাপদাদার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের শিকার যেন হতে না হয়, যেন ক্ষতির শিকার হতে না হয় সেই নিশ্চয়তা পাওয়ার। অথবা সেই গ্যারান্টি যদি নিশ্চিত না হয়, স্বাভাবিকের মতো নিজেদের রক্ষার জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা যে নিতে হবে তা-ই যে বাস্তব সত্য, এটাই যে বাস্তবতা, তা কেউ বেবুঝ হলেও নিশ্চয়ই বুঝে থাকবে।




রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের কী কারণ?


Image may contain: tree, outdoor and nature

তারিখঃ ২৯ জুন, ২০১৭
মানসিক ও চিন্তাগত এবং কিছুটা কাজের চাপে আছি। তাই এ বিষয়ে সংক্ষেপে লিখছি।
সার্বিকভাবে সাধারণ মূল্যায়ন করে পাহাড়ধসের কারণ হিসেবে অনেকে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। তবে বিশেষভাবে কোন এলাকায় কেন বা কী কী কারণে পাহাড়ধস ঘটেছে তা সম্ভবত এখনো চিহ্নিত করা হয়নি। গত ২৭ জুন আমরা দুইজন ঝটিকা এক সফরে পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখে এসেছি। সময় কম থাকায় এলাকাগুলো ভালকরে পরখ করে ধ্বসের কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে যেসকল কারণে পাহাড়ধস হয়েছে তা সংক্ষেপে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।

১। শহরাঞ্চলের যুবউন্নয়ন এলাকা, মোনোঘর এলাকায় মূলত, ড্রেইনেজ সিস্টেম বলতে কিছু না থাকার কারণে বৃষ্টির সময় পানির প্রবাহ উপচে গিয়ে মাটির ব্যাপক ক্ষয় হয়। এতে পাহাড় কেটে যারা পাহাড়গুলোতে ঘিঞ্জি ঘর তুলেছিল তাদের ঘরে মাটির আস্তর ধ্বসে পড়ে। এবং মানূষজন মারা যায়।
২। ভেদভেদি এলাকায় পাহাড়গুলো ন্যাড়া ও একভাবে লম্বালম্বিভাবে খারা এবং তারউপর পাহাড় আরো খারাভাবে কেটে উপরে নিচে টিনের ঘর বানানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রবল বৃষ্টির পরে মাটির আস্তরে ধ্বস নামতে তেমন বেগ পেতে হয়নি।
৩। মানিকছড়িতে পথের পাশে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পের খারা পাহাড়ের মাটি আগে থেকেই ছিল ন্যাড়া। এখানেও দেখা গেছে পথের পাশে পানি প্রবাহের জন্য কোনো ড্রেইন তৈরি করা হয়নি।
৪। মানিকছড়ির সাপছড়িতে কয়েকটি জায়গায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ির পাকা পথের পূর্বদিকে পানি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। অর্থাৎ, পূর্বদিকের পাহাড় থেকে যে পানি পশ্চিমদিকে নিচে নেমে যাবার কথা তা পাকা পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়। পানি পশ্চিমূখী হয়ে নিচে নেমে যেতে পাকা পথের মাঝ বরাবর ড্রেইন বা কালভারট পর্যাপ্তভাবে বানানো হয়নি। এছাড়া পাহাড়ে লাগানো হয়েছে পরিবেশ অনুপযোগী সেগুন গাছ।
৫। খামারপাড়া এলাকা থেকে মোনতলা কিজিং পর্যন্ত এক কিলোমিটার মতন সড়কপথে প্রকৃতি যেন তার রূদ্ররোষ দেখিয়ে দিয়ে বলতে চেয়েছে, প্রকৃতির উপর জবরদস্তি সহ্য করা হবে না! সাপছড়িতে নিচু জায়গা ভরাট করে বানানো হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ভরাট করার জন্য মাটি কাটা হচ্ছে খামারপাড়ার পূর্বদিকের একটি পাহাড় থেকে। পাহাড় এমনভাবে কাটা হচ্ছে যেন পাহাড় কাটা অবৈধ নয়!
৬। খামারপাড়া এলাকায় যেখানে পাকা সড়ক চিড়ে ভেঙে পথকে উত্তর ও দক্ষিণ দু'দিকে পৃথক করে দিয়েছে সেখানে একটি স্বাভাবিক ছড়া বা নালার সৃষ্টি হয়েছে। ছড়া বা নালাটির অস্তিত্ব অনেক আগে ছিল। কিন্তু পাকা পথ বানানোর সময় নালাটিতে খুব কম পানি প্রবাহের উপযোগী করে ছোট করে বানানো হয়েছে। তাই ১২-১৩ জুন যখন প্রবল বৃষ্টি হয় তখন প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবেই নিজের ন্যায্যতা আদায় করে ছেড়েছে।
৭। মোনতলা কিজিং-এর ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। কিজিং শব্দটি থেকে বোঝা যায় এই জায়গাটিতে দুই পাহাড়ের মাঝে চলে যাওয়া খাদ বা হাঁটা পথ ছিল। পরে পাকা সড়ক বানানোর সময় সেই কিজিং ভরাট করে তার চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। ১২-১৩ জুন সুযোগ পেয়ে প্রকৃতি আবার তার জন্য নতুন কিজিং তৈরি করে নিয়েছে। এখানেও পাকা সড়ক উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৫০ ফুট বা তার অধিক চিড়ে পৃথক হয়ে গেছে।
৮। রাঙামাটি খাগড়াছড়ি সড়কের পূর্বপাশের অনেক খারা পাহাড়ের মাটি ধ্বসে পড়েছে। এগুলো আগামীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরকম স্থানের সংখ্যা ৫০/৬০ এর কম হবে না। কেন এগুলো ধ্বসে পড়েছে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে? একে একে বলা যায়- পাহাড়ের মাটি ঝরঝরে; পথ নির্মাণকালে অবাধে পাহাড়কে খারাভাবে কাটা হয়েছে; বৃষ্টির সময় পথের পানি বেয়ে যাবার জন্য কোনো ড্রেইন করা হয়নি; মাটির যাতে ক্ষয় না ঘটে সেরকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
৯। ঘিলাছড়ি ও তার আশেপাশের এলাকায় পাকা সড়ক ঢালু হয়ে ফেটে গেছে বা কিছু অংশ ধ্বসে গিয়ে কয়েকশত ফুট নিচু খারা ঢালু? তৈরি হয়েছে। এগুলো এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, কোনো গাড়ি বা ব্যক্তি নিচে পরে গেলে নিশ্চিত জীবন বিপন্ন হয়ে উঠবে।
কেন এই ধ্বস? সেই একই কারণ, ড্রেইন নেই এবং মাটির ক্ষয় রোধ করার ব্যবস্থা নেই।
সে যাই হোক, ধ্বসের পরে কারণ নির্ধারণ করা সহজ।
তবে এই কাজটি করা প্রয়োজন ছিলো।
এছাড়া কেন প্রকৃতি প্রবলভাবে 'বৃষ্টির ধারা' সৃষ্টি করেছিল তার আবহাওয়া বা জলবায়ুগত বিশ্লেষণ করা দরকার।
পার্বত্য মন্ত্রণালয় পাহাড়ধসের কারণ হিসেবে বজ্রপাতকে দায়ী করেছে। তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকলে ঠিক আছে। তবে 'ফাল্টুমি' ও 'ছ্যাবলামি' করার জন্য বা দায়সারাগোছের অনুসন্ধান করে দায়সারা এই 'কারণ' চিহ্নিত করে থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্তকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
দায়িত্বজ্ঞানহীন অনুসন্ধান...।

লুঙুদুতে প্রাণ আমারঃ তুক্কোপুদি’র দুঃখের কথা শোনাই তবে!

তারিখঃ ০৪ জুন, ২০১৭
শোনো বলি এ কথা,
আমি গল্প লিখতে বসিনি,
লিখতে বসেছি হিল চাদিগাঙের
ছড়া ঝিড়ি নদী নালা বন বাদাড়ের
গেনখুলী ধুধুক হেংগরং বাজি শিঙার কথা!
লুঙুদু যেন সারা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুঃখী মানুষের প্রতীক হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সেই ১৯৮৯ সালের ৪ মে তারা একবার আক্রমণের শিকার হয়েছিল। ঘরবাড়ি সহায়সম্পত্তি আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছিল তাদের। তারপর আরো চলে গেছে যুগ ধেয়ে আরো অনেক বছর। ৮৯ সালের সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি তারা হয়তো ভুলতে বসেছিল। তাই হয়তো তারা আশায় বুক বেঁধে পাকা ঘর দালান বানাতে শুরু করেছিল।
তারা ভুলে গিয়েছিল, এমন এক সময় ছিল পার্বত্যবাসীরা সুন্দর করে ঘর তুলতে, ভালোমতো ঘর তুলতে চিন্তা করতে পারতো না। তারা ভুলে গিয়েছিল পাকা দালান কেন সাধারণ বাঁশের বেড়া দেয়া ঘর তারা একসময় বানানোর চিন্তা করতো না পাছে সেটলার হামলায় সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে তাদের সহায় সম্পদ আবার পুড়ে যায় এই দুর্ভাবনায়। তাই তারা তুলতে শুরু করেছিল পাকা দালান!
তারপর এলো ০২জুন, ২০১৭ শুক্রবারের এক সকাল! এবং তারপর পুড়ে গেল তাদের বাড়িঘর, সহায় সম্পত্তি। সাধের স্বপ্ন তাদের ধ্বংস হয়ে গেল। তাই মনের দুঃখ নিয়ে বুকের কোণ থেকে একবুক আবেগের দলা উগরে দিয়ে বুদ্ধ কুমার চাকমা চিৎকার না করেই সিধে ও সাদা ভাষায় বলে ওঠেন, আমাদের ত্রাণ লাগবে না, মেলে ফেলেন। কী এক শুন্যতা পেয়ে বসলে ভদ্র এক গেরস্থের কাছ থেকে এই কথা উঠে আসে তা কি কেউ জানবে বা কেউ কি বুঝবে?
বাহাস বাদ রেখে আজ বলবো উত্তর মানিকজুর ছড়া গ্রামের তুক্কোপুদি নামে এক নারীর কথা। তিনি তার গ্রামে বসবাস করছেন সেই ছোটোকাল থেকে। বিয়ের বয়স হবার পরে কয়েকজন সন্তান হবার পরে তিনি হারান তার স্বামীকে। তারপর সংসারের ভার কাঁধে নেন। ছেলে মেয়েদের মানুষ করার চেষ্টা করেন। এখন বয়স হবার পরে নাতি নাতনিদের আদর ভালবাসা দিয়ে পুত্র কন্যাদের ঘরে ঘরে ঘুরেফিরে আদর আপ্যায়ন যা পাবার তা পেয়ে বাকি দিন কাটানোর কথা। কিন্তু ভাগ্যে যখন লেখা থাকে দুর্ভাগ্যের লিখন, তখন কে তারে সুখে রাখে! কর্মের বাঁধন যে যায় না খন্ডন! দুঃখ যেন লিপির লিখন তার কপালে!
সকালে ঘুম থেকে উঠে তুক্কোপুদি ভাত রান্না করার পরে আয়েশ করে তার নাতিনদের সাথে মশকরা খুনসুটি করে সময় কাটাচ্ছিলেন। সময় বেশ কাটছিল বটে! কিন্তু মানিকজুর ছড়া বিলের ওপারে তিনি দেখতে পেলেন ধোঁয়া উড়ছে, আগুন লেগেছে, চলছে চিৎকার। মানুষজনের পালিয়ে আসার স্রোত তিনি দেখতে পেলেন। দূর থেকে তা দেখেই তিনি নিজের ঘরের উঠানে বসে আপন মনে জীবনের কথা হয়তো ভাবছিলেন। এবং চিন্তা করছিলেন, আপন জাতভাইবোনদের ঘরবাড়ি পুড়ে গেল। বাঁচাতে পারলো না কিছুই। পরিচিত আত্মীয় কেউ মারা গেল কি না তা নিয়ে হয়তো তিনি দুশ্চিন্তা করছিলেন। তিনি ভাবতে পারেননি, বিরাট একটি ধান ক্ষেতের মাঠ পেরিয়ে সেটলাররা মানে দুর্বৃত্তরা তাদের গ্রামেও আসবে! হয়তো তিনি তার জন্য এক কাপড়েই প্রাণ নিয়ে ঘর থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন আরো কিছুক্ষণ পর!
তারপর তিনি দেখলেন ৫শত বা ৬শত বা তারও অধিক সেটলার ধেয়ে আসছে তাদের গ্রামের দিকে। গ্রামের সমর্থ জোয়ান মরদ পুরুষরা রণসজ্জ্বা নিয়ে কান্তা বাদল দা কুড়াল বিয়োঙ খন্তা বা হাতে যা পেল তা-ই নিয়ে গ্রাম বাঁচাতে রুখে দাড়ানোর উদযোগ করলো। শুরু হলো চিৎকার চেঁচামেচি। পুরুষ ও নারীরা একযোগে চিৎকার দিলো, উজোও উজোও, বাঙালুনে আদাম ঘিরদন, উজোও উজোও! গ্রামের নারীরা বুদ্ধ ভগবানের নাম নেয়া শুরু করলো। কিন্তু তারপরও তারা তাদের ভবিতব্যকে ছেড়ে দিলো কপালের হাতে! এবং এভাবে গ্রামের শক্ত সমর্থ নারী ও পুরুষরা রুখে দাঁড়ালো আধ থেকে পৌনে একঘন্টার জন্য। তারা কান্তা বাদল দিয়ে ’দুর্বৃত্তদের’বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলো। রুখে দাঁড়াবো না কেন, জুলি ন উধিম কিত্তেই, কবিতা চাকমার এই কবিতাটি তো তারা পড়েনি!
কিন্তু এ কি! দুর্বৃত্তদের সামনে ’চিদিরে ভদরা’ ওরা যেন কারা? দুর্বৃত্তদের হয়তো প্রতিরোধ করা যায়! কিন্তু যাদের হাতে থাকে আইন ও শক্তির লম্বা হাত, তাদের সাথে এই নিরীহ গ্রামবাসীর কীইবা করবে? এযাবৎ বছরের পর বছর তো তারা এই শক্তির পুজো করে এসেছে ঘরে, গ্রামে, ঝাড়ে, হাটে বাজারে বা পথেঘাটে! তারা আইনী হোক বা অপ্রকাশ্য যে কোনো শক্তিই হোক!
তাই তারা, মানে গ্রামের জনগণ মানে জুম্মা খাপ্পোআ সহজ সরল পাহাড়িরা এবার ’রণে ভঙ্গ’ দিয়ে পিছাতে শুরু করলো। ’য পলায়তি স’ জীবতি’ এই মন্ত্রকে ধারণ করে তারা জীবন বাঁচানো ’ফরজ’ দর্শনকে বাস্তবে রূপ দিল। তারা একান্তভাবেই নিজের প্রাণই তাই হাতে নিয়ে যেতে পারল! নিতে পারলো না সহায় ও সম্পত্তি, এমনকি ’উড়ন পিনন’ মানে পরিধানের কাপড় তা-ও তারা সঙ্গে করে নিতে পারলো না। তারা পালাতে লাগলো। শয়ে শয়ে তারা বাঁশঝাড়, ঝোপঝাড়, আসামলুদি বন, গাছবাঁশ বাগান, ঘেরা দেয়া বেড়া ডিঙিয়ে যেতে লাগল দূর পাহাড়ে! এবং তারা পিছনে দেখার সময়ও খুব কম পেল। কিন্তু যে-ই পিছনে তাকিয়ে দেখল, সে-ই দেখল, দূরে,ওই দূরে, যেখানে তাদের চিরচেনা গ্রাম রয়েছে সেখানে উড়ছে লেলিহান শিখা, বাজছে দামামা! ফুটছে বাঁশ। একইসাথে তাদের ’চিদঅ বদু’ মানে বুকের একান্ত ভেতরটা টনটন করতে লাগল। তবু তারা খুশী যে প্রাণটা তো বাঁচলো!
এভাবেই তুক্কোপুদি নিজের গ্রামে থেকে ০২ জুন সকালে পালিয়ে গিয়েছিল। তারপর এক কাপড়ে তার আশ্রয় হলো ভুইওছড়া নামে এক গ্রামের জুনিয়র স্কুলের একটি বারান্দায়। সেখানে সে আজ ৪ জুন অবধি রইল বসে জেগে ঘুমিয়ে বা চিন্তা দুশ্চিন্তা করে। এদিকে তার নাতিনরাও এসেছে তার সাথে। তাদেরকে নিয়ে কাটতে লাগল যাকে বলে উদ্বাস্তু জীবন! কেউ কি বুঝবে তুক্কোপুদির দুঃখের কথা? তার বুকের ভেতরের হুুহু চোখের পানি ছাড়া কান্না ও একরাশ শুন্যতার কথা। চোখের পানি কি সহজে আসেেএই পোড়ার জুম্মমিলা বুড়োমিলার চোখে! কিন্তু তার মন কি তবে কাঁদে না। কেঁদে ওঠেনা কি তার আবেগ! মনে কোণে কি অশ্রু ঝড়ে না তার?!
তুক্কেুপুদি শুধু একা নেই এই স্কুলে। সাথে রয়েছে তিন গ্রামের উদ্বাস্তু আরো অনেকেই।
হামলার দিন০২ জুন রাতটি তারা কাটালো। ০৩ জুন তারা ভয়ে ভয়ে কেউ যেতে চাইল তাদের গ্রামে। কী অবস্থা হয়েছে তাদের বাড়ির তা জানতে তারা সেখানে যেতে চাইল। কিন্তু ’বেলে সেন্টার’ বা ’গুজবীয় ব্রডকাস্টিং করপোরেশন’ থেকে তারা জানতে পারলো, পুলিশ নাকি জানিয়ে দিয়েছে, গ্রামে তিনজনের বেশি ঘোরাফেরা করলে এরেস্ট করা হবে। আচ্ছা জ্বালা বটে! কিন্তু, আইনী শক্তির কথা তো ফেলনা নয়! তাই তারা গ্রামে গেলে তিনজন একসাথে যায়। ভুলেও তারা ৪ জন একত্র হয়ে গ্রামের দিকে পা বাড়ায় না।
তুক্কোপুদির পরিবারে সাকুল্যে রয়েছে ৫ জন। তিনি রয়েছেন, রয়েছে তার এইচএসসি ফাইনাল দেয়া একটি পুত্রধন, সাথে তার কন্যা ও কন্যার জামাই। আর রয়েছে একটি নাতিন। তার পুত্রধন এইচএসসি পরীক্ষা দেবার পরে গ্রামে এসেছে। এসেই পরে গেল অঘটনে। কন্যার জামাই একবার তাদের গ্রামের বাড়ি দেখতে গেলেন। দেখলেন পুড়ে গেছে তাদের ঘর।কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুড়ে গেছে ঘরের যাবতীয় সরঞ্জাম। হাড়িপাতিল তো পুড়ে গেছেই! পুড়ে গেছে বালিশ, পাটি, বুরগি, পিনন, খাদি, লুঙ্গি বা গামছা। পুড়ে গেছে খাট পালংক, খাটিয়া আলনা, ছিল ছিল একটি আয়না। তাও নেই! কিছুদিন আগে মাত্র তাদের পরিবার জমি থেকে ধান কেটে কিছু বস্তায় কিছু খোলা জায়গায় রেখে দিয়েছিল। এই ঝুমঝুম বৃষ্টির মাঝেও তুক্কোপুদির কন্যার জামাই দেখতে পেেেলন, ধানগুলো পুড়ে গেছে। কিছু আছে বটে তবে ঝেড়ে মুছে খেলে তিতাই লাগবে। তাদের জমি থেকে তারা এবার দুইশ আড়ি মানে প্রায় ১ হাজার বা তারও বেশি কেজি ধান পেয়েছিল। সব শেষ হয়ে গেছে।
কী আর করা! তিনি ফিরে এলেন ভুইওছড়া জুনিয়র স্কুলের রুমে। সেখানে তিনি খোলা জায়গায় এলিয়ে দিলেন গা। তারপর চিন্তা করা ছেড়ে দিলেন।
এবার বলি তুক্কোপুদি চাকমার আরেক মেয়ের কথা! মেয়ের নাম শিমলিতা চাকমা। তাদের গ্রামেই শিমলিতা মানে তুক্কোপুদি চাকমার কন্যার ঘর। তাদের বাড়িতে রয়েছে ৫ জন। শিমলিতা নিজে, তার তিনটি কন্যা, আর তার শিমলিতার স্বামী। তিনটি কন্যার মধ্যে একটি পড়ে ৮ম শ্রেনীতে। আরো দুইজন আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাদের সবার বইপত্র খাতা কাগজ কলম পুড়ে গেছে সাম্প্রদায়িকতার লেলিহান শিখায়।
তারাও তাদের মা তুক্কোপুদিদের সাথে ভুইওছড়া গ্রামের জুনিয়র স্কুলের রুমে এখন আশ্রয় নিয়েছে।
আরো দূরে আদরকছড়া গ্রামে বাস করে তুক্কোপুদি চাকমার আরেক কন্যা। সে জানিয়েছে আগামী বুধবার বামে আদরকছড়া বাজারে হাটবাজার বসবে। সেখান থেকে তিনি তার মা, তার বোন ও বোন জামাই এবং তার বোন ঝি, ভাইয়ের জন্য কাপড় চোপড় কিনে এনে দেবেন। এরই মাঝে তাদের কাটাতে হবে এক কাপড়ে। কী আর করা! ভাগ্যে যা আছে তা-ই হবে! ভগবান বুদ্ধ, বনবান্তে সহায়। তিনি যদি সহায় না হন তবে তাদের অনেককেই কেন তিনটিলা বনবিহারে আশ্রয় নিতে হলো!
তাদের কষ্টের কথা কি সরেজমিনে তোমরা দেখতে যেতে চাও? তবে যাও লুঙুদু উপজেলায়। সেখানে গেলে তোমরা দেখবে। বিস্তীর্ণ এলাকা পুড়ে গেছে। সব শুনশান। পোড়াবাড়ি ও ভিটা তোমরা দেখবে। তারপর দেখবে হাঁস মুরগি গরু ছাগল চড়ছে মাঠে উঠানে। দেখার কেউই নেই!

লুঙুদু হামলা বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাধারণ মূল্যায়ন

তারিখঃ ০৪ জুন, ২০১৭
[ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে এই মূল্যায়ন নিশ্চয়ই আমাদের ভাবতে শেখাবে এই প্রত্যাশা রেখে লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার করলাম]
মোট ১১ টি বাংলা পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণের ০৩ জুন, ২০১৭ প্রকাশিত সংখ্যায় লুঙুদু সাম্প্রায়িক হামলা বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাধারণ পর্যালোচনামূলক সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানে করা হয়েছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, পত্রিকার প্রতিবেদক বা রিপোর্টারগণ কেউই লুঙুদুর মূল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে তথ্য সংগ্রহ করেননি। তাই দেখা গেছে, আসলে কী ঘটনা ঘটেছে তা সংগ্রহ করতে অনেকেই সোর্স হিসেবে ফেসবুককেই ব্যবহার করেছেন। এতে প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে মারাত্মক ত্রুটি দেখা গেছে।
বিশেষ করে গাজীপুরে ব্রয়লার বিস্ফোরণের একটি ছবি লুঙুদু’র ঘটনা হিসেবে ফেসবুকে কে বা কারা শেয়ার করার পরে সেই ছবি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকায় মূল হেডিঙ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি পত্রিকা সেই ছবিটি ব্যবহার করেছে। এতে প্রশ্ন থেকে যায়, রাঙামাটি জেলার লুঙুদুতে কোনো পত্রিকারই কি কোনো প্রতিনিধি নেই? তারা কি এই গুরুতর ত্রুটি ধরিয়ে দিতে পারেননি? অথবা নাকি অসাবধানতাবশতঃ না হয়ে এই ত্রুটিকে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে? খেয়াল করা গেছে গাজীপুরের ব্রয়লার বিস্ফোরণের এই ছবিটি প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় লীড কলাম আকারে ছাপা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে দৈনিক আমাদের সময়ের শেষ পৃষ্ঠায়। ব্যবহার করা হয়েছে যায়যায়দিন পত্রিকার শেষ পাতায়। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়ও এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সমকাল পত্রিকায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে বলে জেনেছি। প্রতিষ্ঠিত এই সকল পত্রিকার রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি যারা রয়েছেন তাদের নিশ্চয়ই লুঙুদু উপজেলারও প্রতিনিধি বা পরিচিত কেউ থাকার কথা। যখন এই ছবিটি পত্রিকায় ব্যবহার করা হচ্ছে তখন তারা এই ছবিটি ভ্যারিফাই কেন করেননি তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে থাকলো। অথবা জেনেশুনেই এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তাও এখন প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে যাবে বলেই আশংকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। হয়তোবা ঘটনার মাত্রা নিয়ে বা ঘটনা নিয়ে যাতে প্রশ্ন করা যায় সে দিকটি মাথায় রেখে এই ’কাঁচা ভুল’ যে জেনেশুনে করা হয়নি তা-ই বা কে বলতে পারে?!
পত্রিকার প্রতিবেদনের দিকে খেয়াল রাখলে বোঝা যায় ১১ টি প্রতিবেদন আলাদা আলাদা মনে হলেও মূলত, দুএকটি বাদে বাকি সকল প্রতিবেদনের মূল সূত্র বা মূল লেখক বা মূল তথ্যদাতা বা মূল তথ্য সংগ্রহকারী সম্ভবত দুইজন বা তিনজন হতে পারেন। তাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করার পরে প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং পরে তার দুএকটি বাক্য বা বাক্যাংশ বা প্যাটার্ন বদল করে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনসমূহ পড়ে ভাষাগত ও বানানগত নানা ভুল সহজেই চোখে পড়ে। বিশেষ করে দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রথম অংশেই এই ভুলচুক বেশি উৎকটভাবে দৃশ্যমান।
প্রতিবেদনসমূহ পড়ে আমি তিনটি ক্যাটাগরিতে প্রতিবেদনসমূহ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। তাতে দেখা গেছে, ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে প্রশাসনের সূত্র থেকে ১০/১২টির বেশি বলা হয়নি। তবে একটি বেসরকারী সূত্র থেকে ৮৬টির মতো ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পাহাড়িদের পক্ষ থেকে ২০০ বা আড়াইশ বা তারও অধিক বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে। এবং এতে প্রায় সকল পত্রিকায় জনসংহতি সমিতি লুঙুদু উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমার উদ্ধৃতি দিয়ে বাড়িঘর পুড়ে যাবার সংখ্যাটি বলা হয়েছে।
প্রশাসনের বক্তব্য সাধারণভাবে গতানুগতিক হয়ে থাকে। এতে সাধারণত, পুড়ে যাবার ঘটনা স্বীকার করা হলেও কম পুড়ে যাবার কথা স্বীকার করা হয়। তাছাড়া ঘটনার জন্য আদতেই দোষী কোন অংশ তা জানার পরেও জটিলতা এড়ানোর জন্য দোষী কোন অংশ তা স্পষ্ট করে বলা হয় না। এখানেও আমরা সেই প্রবণতা দেখতে পাই। অন্যতম জাতীয় একটি দৈনিকে বলা হচ্ছে ’পাহাড়ি বাঙালি সমস্যার কারণে’ ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
তবে দুএকটি পত্রিকায় উদ্ধৃতিসমূহ পাঠ করে সহজেই বোঝা যায় ঘটনার মূল অংশ কে বা কারা ছিল। এক্ষেত্রে আমরা দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মমিনুল ইসলামের বিবরণ উদ্ধৃত করতে পারি। তাকে উদ্ধৃত কওে বলা হচ্ছে- তিনি ’.. ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নয়নের লাশ নিয়ে র‌্যালি করে আসার পথে কিছু লোক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। এ সময় পুলিশসহ যৌথবাহিনী ও প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ায় পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’। এতে দেখা যায় মিছিল করার সময়ই কিছু লোক ’অপ্রীতিকর’ভাবে হামলা করেছে ও পাহাড়িদের বাড়িঘরে নির্বিচারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় বলা হয়েছে- ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তাঁরাও নিরুপায় হয়ে পড়েন। অর্থাৎ, ঘটনা ঘটার সময়ে আইন শৃংখলা বাহিনী উপস্থিত ছিল। তবে তাদের ভুমিকা রাখার মতো পরিস্থিতি সেখানে ছিল না। কিন্তু পাহাড়ি জনগণের পক্ষ থেকে বিভিন্নজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরে আমরা দেখতে পাই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ভুমিকা নিরপেক্ষ না থেকে সাপেক্ষে যেন তারা একটি পক্ষের দিকে বেশি ঝুঁকে গেছেন!
পত্রিকাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি একপেশে ও পাহাড়ি বিদ্বেষী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা। লংগদুতে অনুষ্ঠিত সমাবেশের খবরে বক্তাদের উদ্ধৃত করে উক্ত পত্রিকায় বলা হয়েছে- ’সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করার জন্যে পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়- এনিয়ে গত কয়েকমাসের ব্যবধানে পাহাড়ে তিনজন মোটর সাইকেল চালককে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। প্রতিবেদনে পাহাড়ি জনগণের কোনো বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে সেটলার বাঙালি সংগঠনের খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ১৪৪ ধারা জারি করার কথা একটু করে বলা হলেও প্রশাসনের আর কোনো ধরণের উদ্ধৃতি বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি।

সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...